এক্সারসাইজ করার সঠিক সময় কোনটি

এক্সারসাইজ করার সঠিক সময় কোনটি, এ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাহলে আপনি সঠিক জায়গাতে এসেছেন আজকের আর্টিকেলে আমরা এক্সারসাইজ করার নিয়মগুলি সম্পর্কে আলোচনা করব।

এক্সারসাইজ করার-সঠিক সময়-কোনটি

এছাড়াও আজকের এই আর্টিকেলে আমরা এক্সারসাইজ কোন সময় করলে সব থেকে ভালো হয় এ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নিন এক্সারসাইজ কিভাবে আর কোন কোন উপায় করলে উপকারিতা পাওয়া যায় সেগুলো কি কি।

পোস্ট সূচিপত্রঃ এক্সারসাইজ করার সঠিক সময় কোনটি জেনে নিন

এক্সারসাইজ করার সঠিক সময় কোনটি

ব্যায়াম শরীর ও মনের জন্য অপরিহার্য। তবে সঠিক সময়ে এক্সারসাইজ করা কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়। একেকজনের শরীরের চাহিদা এবং সময় ভিত্তিতে এক্সারসাইজ সঠিক সময় ভিন্ন হতে পারে।এক্সারসাইজ করার সঠিক সময় কোনটি এ বিষয় নিয়ে নিচে আলোচনা করা হবে।
  • সকালের সময় এক্সারসাইজ করলে শরীরের মেটাবলিজম সক্রিয় হয় যা সারাদিনের এনার্জি লেভেল ঠিক রাখে। এ সময় পরিবেশ ঠান্ডা এবং কম দূষিত থাকে ফলে শ্বাস নেওয়া সহজ হয়। গবেষণা দেখা গেছে সকালে ব্যায়াম করলে মনোযোগ বাড়ে এবং মানসিক চাপ কমে। যারা ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন তাদের জন্য সকাল বেলা খালি পেটে ব্যায়াম ভালো ফলাফল হতে পারে।
  • দুপুরে এক্সারসাইজ করার সময় শরীরে তাপমাত্রা এবং ফিটনেস লেভেল তুলনামূলক বেশি থাকে। যারা অফিসে কাজ করেন তাদের জন্য দুপুরের লাঞ্চের পর এক্সারসাইজ করা একটি ভালো অভ্যাস হতে পারে। এটি দুপুরের ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে এবং শরীরের শক্তি পুনরুদ্ধার করে।
  • বিকেলে শরীরের শক্তি এবং সহ্য শক্তি সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকে। যারা মাসল বিল্ডিং বা হেবি ওয়ার্কআউট করেন তাদের জন্য বিকেলের সময় সেরা। এ সময় মাংসপেশির নমনীয়তা বাড়ে এবং ইনজুরির ঝুঁকি কমে। এছাড়া এটি কর্মক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে।
  • অনেকের জন্য রাতের ব্যায়াম কাজের চাপ থেকে মুক্তি দেয় এবং ঘুমের মান উন্নত করে। তবে বেশি ভারী ব্যায়াম করলে ঘুমের আগে শরীর বেশি উত্তেজিত হয়ে যেতে পারে যা ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। হালকা ব্যায়াম যেমন ইয়োগা বা স্ট্রেচিং রাতে উপকারী।
  • এক্সারসাইজের সঠিক সময় নির্ধারণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত রুটিন এবং লক্ষ্য গুরুত্বপূর্ণ। যদি সকালের সময় পান না তবে বিকেলে বা রাতে ব্যায়াম করলে ও তা উপকারী। তবে নিয়মিত এক্সারসাইজ করার অভ্যাস গড়ে তোলা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
  • এক্সারসাইজের সময় নির্ধারণ করার আগে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। ওজন কমাতে চাইলে, মাসল বিল্ডিংয়ের জন্য বিকেলে, এবং মানসিক চাপ কমাতে রাতে ব্যায়াম করুন। শরীরের প্রাকৃতিক ঘড়ি অনুসারে সময় নির্ধারণ করলে এক্সারসাইজের ফলাফল ভালো পাওয়া যায়।
  • সঠিক সময়ে ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুললে শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত হয়। সময় নির্ধারণে ব্যক্তিগত লক্ষ্য এবং দৈনন্দিন রুটিন এর সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

সকালবেলা এক্সারসাইজ করার উপকারিতা

সকালবেলা এক্সারসাইজ করা শরীর এবং মনের জন্য ব্যাপক উপকারী। শুধু ফিটনেস উন্নত করে না বরং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এক্সারসাইজ করার সঠিক সময় কোনটি অনেকেই মনে করে সকালবেলা কারণ সকালের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং চাপ কম হয় এবং সময় এক্সারসাইজের জন্য আদর্শ। সকালবেলা এক্সারসাইজের কয়েকটি উপকারিতা নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।

মেটাবলিজম বাড়ায় ও এনার্জি সরবরাহ করেঃ সকালবেলা ব্যায়াম শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে যা সারাদিন ক্যালোরি বার্নে সাহায্য করে। সকালে এক্সারসাইজের ফলে শরীর উজ্জীবিত থাকে এবং কাজ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে কার্ডিওভাসকুলার এক্সারসাইজ করলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে এবং অক্সিজেন শরীরের প্রতিটি অংশে সহজে পৌঁছায়। এটি ক্লান্তি কমায় এবং মানসিকভাবে মনোযোগী করে তোলে।

মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিঃ সকালে এক্সারসাইজ করলে ব্রেন থেকে ইনডোর ফিন নামক হরমোন নিঃসৃত হয় যা মনকে প্রফুল্ল রাখে এবং হতাশা কমায়। বিশেষ করে যারা মানসিক চাপে ভুগছে তাদের জন্য সকালের এক্সারসাইজ এক প্রাকৃতিক চিকিৎসা। গবেষণা দেখা গেছে সকালের ব্যায়াম কর্মক্ষমতা এবং মনোযোগ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

ওজন কমাতে কার্যকরঃ সকালের এক্সারসাইজ বিশেষ করে খালি পেটে করলে ফ্যাট বার্নিং প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। সকালের ব্যায়ামের সময় শরীর ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়ায় যা গ্লুকোজ সঠিকভাবে ব্যবহার করতে সাহায্য করে। ফলের শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমে। নিয়মিত সকলের এক্সারসাইজ ফিটনেস বজায় রাখার পাশাপাশি অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে।

রাতে ভালো ঘুম নিশ্চিত করেঃ সকালে এক্সারসাইজ করার আরেকটি বড় সুবিধা হলো এটি রাতে গভীর এবং প্রশান্তিময় ঘুম নিশ্চিত করে। সকালের ব্যাংক শরীরের প্রাকৃতিক ঘড়ির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যা ঘুমের মান উন্নত করে। এছাড়া সকালের এক্সারসাইজ রাতের নিদ্রাহীনতা কমাতে সহায় হয়।

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ সকালে ব্যায়াম করার ফলে শরীরের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয়। এটি শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি করে এবং সেল রিনিউয়াল প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে। যারা নিয়মিত সকালে এক্সারসাইজ করেন তাদের ঠান্ডা, সর্দি, কাশি, এবং অন্যান্য সাধারণ অসুখ কম হয়। এছাড়া এটি দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।

সারাদিনের সময় ব্যবস্থাপনার সাহায্য করেঃ সকালে এক্সারসাইজ করলে দিনের অন্য কাজ করার সময় বেঁচে যায়। এটি একটি সক্রিয় দিনের সূচনা করে এবং সারাদিনের কাজ করার জন্য মন এবং শরীরকে প্রস্তুত করে। সকালের ব্যায়ামের অভ্যাস দৈনন্দিন সময় ব্যবস্থাপনার শৃঙ্খলা আনতে সাহায্য করে। যারা সকালে ব্যায়াম করেন তারা দিনব্যাপী কর্মক্ষম এবং সংগঠিত থাকেন।

ওজন কমাতে ব্যায়াম কতক্ষণ করা উচিত

ওজন কমানোর জন্য ব্যায়ামের সময়কাল নির্ধারণ করা নির্ভর করে ব্যক্তির শারীরিক অবস্থান লক্ষ্য এবং ব্যস্ত কর্মসূচির উপর। সঠিক সময় ও ধৈর্যের সঙ্গে নিয়মিত ব্যায়াম করলে কার্যকর ফলাফল পাওয়া সম্ভব। এ বিষয় নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।
  • প্রতিদিন অন্তত ২০ থেকে ৩০ মিনিট ব্যায়াম যেমন দৌড়ানো বা দ্রুত হাঁটাহাঁটি করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এটির হৃদ যন্ত্রের কর্ম ক্ষমতা বাড়া এবং ক্যালরি পোড়াতে সাহায্য করে।
  • হিট ব্যায়াম ওজন কমানোর জন্য অত্যন্ত কার্যকর। মাত্র ২০ থেকে ৩০ মিনিটের হাই ইন্টেনসিটি এক্সারসাইজেশনে প্রচুর ক্যালরি পোড়ানো সম্ভব। এটি শরীরের বিপাক ক্রিয়া ত্বরান্বিত করে যা দীর্ঘ সময় ধরে ফ্যাট বার্ন করে।
  • ওজন কমানোর পাশাপাশি পেশী গঠনের জন্য প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট ওজন তোলা বা স্ট্রেন্থ ট্রেনিং করতে পারেন। এটি শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট কমায় এবং দীর্ঘমেয়াদে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন ওজন কমানোর জন্য নিয়ম ভাবে ব্যায়াম করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে এক থেকে দুই দিন বিশ রানের জন্য রাখলে শরীর পুনরুদ্ধার করতে পারা যায়।
  • যদি কার্ডীও ট্রেনিং সম্ভব না হয় তাহলে প্রতিদিন এক ঘন্টা দ্রুত হাঁটাহাঁটি করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে এবং এটি ধীরে ধীরে ক্যালোরি বাড়ি দেয় এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে।

রাতে ব্যায়াম করলে শরীরে কি প্রভাব পড়ে

রাতে ব্যায়াম করা অনেকের জন্যই পছন্দের সময় বিশেষ করে যারা কর্মব্যস্ত দিন কাটান। রাতের ব্যাংক শরীর এবং মনের ওপর বেশ কিছু টিবাচক প্রভাব ফেলে। তবে এটি ব্যক্তিগত অভ্যাস এবং শরীরের অবস্থা আর ঘুমের সময়ের উপর নির্ভর করে। এক্সারসাইজ করার সঠিক সময় কোনটি অনেকে রাতকে পছন্দ করে তাই নিচে রাতের ব্যায়ামের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হলো।

মাংসপেশী শক্তি এবং কার্যকারিতার বৃদ্ধিঃ রাতে ব্যায়াম করলে মাংসপেশির কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। দিনের বাকি সময় শরীর উত্তপ্ত থাকে এবং মাংসপেশী পূর্ণ শক্তিতে কাজ করার জন্য প্রস্তুত থাকে। ফলে রাতে ভারী ব্যায়াম যেমনঃ ওজন তোলা বা স্ট্রেন্থ ট্রেনিং করা বেশ কার্যকর হতে পারে। গবেষণা দেখা গেছে সন্ধ্যার পর শরীরের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকে যা মাংসপেশির গতি এবং স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়।
এক্সারসাইজ করার-সঠিক সময়-কোনটি
স্ট্রেস কমায় এবং মানসিক প্রশান্তি আনে ঃ দিনের কাজের চাপের পর রাতে ব্যায়াম করা মানসিক প্রশান্তি আনে। এটি শরীরে এন্ডোরফিন নিঃসরণ করে যা মনকে ফ্রেশ করে এবং স্ট্রেস কমায়। বিশেষ করে যোগ ব্যায়াম বা ধীর গতির ব্যায়াম রাতে করলে এটি মানসিক প্রশান্তি এবং আরামের অনুভূতি দেয়। তাই রাতে ব্যায়াম করা দিনের উদ্বেগ চিন্তা থেকে মুক্তির ভালো উপায়।

ওজন কমানোর জন্য কার্যকরঃ রাতে ব্যায়াম করলে ক্যালরি বার্ন এর হার বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে হাই ইন্টেন্সিটি ট্রেনিং রাতে করলে শরীর অতিরিক্ত ক্যালরি পোড়ায়। এটি শরীরের মেটাবলিজম কে ত্বরান্বিত করে এবং ফ্যাট বার্নিং প্রক্রিয়া চালু রাখে এবং যার ফলে দিনের বেলা সময় পান না যারা তারা যাতে ব্যায়াম করার জন্য সময় বের করে নেয় এবং রাতের ব্যায়াম ওজন নিয়ন্ত্রণের ভালো মাধ্যম।

ঘুমের মানের ওপর প্রভাবঃ রাতে ব্যায়ামের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ঘুমের মানের ওপর পড়ে। হালকা এবং ধীর গতির ব্যায়াম যেমন যোগ ব্যায়াম বা হাটা ও ঘুমের মান উন্নত করতে সাহায্য করে। তবে ভারী এবং বেশি মাত্রায় উত্তেজনামূলক ব্যায়াম করলে ঘুম আসতে বিলম্ব হতে পারে। তাই রাতে ব্যায়াম করার সময় এর সঙ্গে নিজের ঘুমের সিডিউল সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখা জরুরী।

হরমোনের কার্যকারিতা উন্নত করেঃ রাতে ব্যায়াম করা শরীরের বিভিন্ন হরমোনের কার্যকারিতা বেড়ে যায়। বিশেষ করে গ্রোথ হরমোন নিঃসরণ রাতে বেশি হয় যার শরীরের পুনর্গঠনে সাহায্য করে। এ হরমোন ত্বক, হাড় এবং মাংসপেশি পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখে। এছাড়া রাতে ব্যায়াম করলে শরীরের কর্টিসল লেভেল কমে যায় যা মানসিক চাপ কম করে।

রাতের খাবার হজমে সহায়কঃ রাতের খাবারের পর হালকা ব্যায়াম করলে হজম প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। এটি শরীরে গ্লুকোজ এবং ফ্যাটের প্রক্রিয়াকরণের সাহায্য করে। ফলে পেটে ফোলা ভাব বা অস্বস্তি কমে এবং শরীর আরামদায়ক থাকে। যারা রাতে বেশি খাবার খেয়ে থাকেন তাদের জন্য হালকা ব্যায়াম যেমন ওয়ার্কিং বা স্ট্রেচিং বেশ কার্যকর।

খালি পেটে ব্যায়াম করার উপকারিতা

খালি পেটে ব্যায়াম করা স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের মধ্যে একটি জনপ্রিয় অভ্যাস হয়ে উঠেছে। বিশেষত যারা ওজন কমাতে চান এবং শরীরের মেটাবলিজম বাড়াতে আগ্রহী তাদের জন্য একটি কার্যকর পদ্ধতি হতে পারে। যদিও এটা সবার জন্য সমান উপযোগী নাও হতে পারে তবে এর কিছু নির্দিষ্ট উপকারিতা রয়েছে। যারা এক্সারসাইজ করতে চাই তারা এক্সারসাইজ করার সঠিক সময় কোনটি হিসেবে সকালে খালি পেটে এক্সারসাইজ করার জন্য বেছে নেয়।

ফ্যাট বার্নিং ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়ঃ খালি পেটে ব্যায়াম করলে শরীর শক্তির জন্য প্রধানত জমে থাকা ফ্যাট ব্যবহার করে। যখন খালি পেটে ব্যায়াম করা হয় তখন ইনসুলিন এর স্তর কম থাকে। যা ফ্যাট বার্নিং প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। বিশেষ করে কার্ডিওভাস্কুলার ব্যায়াম যেমন দৌড়ানো বা সাইকেলিং, খালি পেটে করলে দ্রুত ওজন কমানোর সম্ভাবনা বাড়ে। খালি পেটে ব্যান ফ্যাট অক্সিডেশনের হার প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি করে।

শরীরের জমা টক্সিন বের করতে সহায়কঃ খালি পেটে ব্যায়াম করার সময় শরীরের স্বাভাবিক ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়া সক্রিয় হয়। শরীরের জমে থাকা বর্জ্য পদার্থ ঘাম এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। সকালে খালি পেটে ব্যায়াম করলে লিভার এবং কিডনির কার্যকারিতা উন্নত হয় যার শরীরকে বিষমুক্ত করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এই প্রক্রিয়াটি শরীরকে দিনব্যাপী সজীব ও চাঙা রাখে।

হার্টের কার্যক্ষমতা উন্নত করেঃ খালি পেটে হালকা কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়াম, যেমন হাটা বা দৌড়ানো হৃদ যন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। এটি রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে হৃদ যন্ত্র কে আরো শক্তিশালী করে তোলে। প্রথম অবস্থায় শরীর শক্তির জন্য জমাট ফ্যাট ভাঙতে শুরু করে যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত খালি পেটে ব্যায়াম হৃদ স্পন্দনকে সঠিক মাত্রায় রাখতে ও সাহায্য করে।

অ্যান্টি-এজিং প্রভাব ফেলেঃ খালি পেটে ব্যায়াম শরীরের কোষ মেরামত এবং পুনরায় বিকরণ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। এটি শরীরের ফ্রি রেডিক্যালস দূর করতে সাহায্য করে যা ত্বকের বার্ধক্য জনিত সমস্যা কমায়। বিশেষত যোগব্যায়াম বা ধ্যান খালি পেটে করলে ত্বকে এটি প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা নিয়ে আসে এবং শরীরের বার্ধক্যের লক্ষণ গুলি দেরিতে দেখা যায়।

ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ খালি পেটে ব্যায়ামের সময় শরীর ড্রেনিন নামে একটি হরমোন নিঃসরণ করে যা ক্ষুধার অনুমতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। সকালের ব্যায়াম খুদার মাত্রাকে সঠিকভাবে সামঞ্জস্য করতে সাহায্য করে। যার ফলে সারাদিন অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে। এটি শরীরের ওজন কমানোর পাশাপাশি সঠিক খাদ্যভাস গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

কোন সময় ব্যায়াম করলে ওজন দ্রুত কমে

ওজন কমানোর জন্য ব্যায়ামের সময় নির্ধারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দ্বীনের নির্দিষ্ট সময়ে সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যায়াম করলে ওজন দ্রুত কমানো যায়।

সকালে খালি পেটে ব্যায়ামঃ সকালে খালি পেটে ব্যায়াম করলে শরীর দ্রুত ফ্যাট বার্ন করে। খালি পেটে শরীর শক্তির জন্য জমা ফ্যাট ভাঙ্গতে শুরু করে। যা ক্যালরি খরচ বাড়ায় এছাড়া সকালের আলো মেটাবলিজম বাড়াতে সহায়তা করে। সকালে ব্যায়াম করার অভ্যাস পুরো দিনের শারীরিক কার্যকলাপ বাড়ায় যা ওজন কমানোর ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর।
খাবারের দুই থেকে তিন ঘন্টা পর ব্যায়ামঃ ওজন কমানোর জন্য খাবার খাওয়ার কিছু সময় পর ব্যায়াম করা সবচেয়ে উপযুক্ত। এ সময় শরীরের মেটাবলিজম সক্রিয় থাকে যা অতিরিক্ত ক্যালরি পোড়াতে সাহায্য করে। খাবারের পর ব্যায়াম করলে ইনসুলিন এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং শরীর অতিরিক্ত গ্লুকোজ কে শক্তিতে রূপান্তরিত করে।

বিকেলে ব্যায়াম করাঃ বিকেলের সময় শরীরের তাপমাত্রা এবং মাংসপেশির কার্যক্ষমতা সবচেয়ে বেশি থাকে। এ সময়ে উচ্চ তীব্রতা ব্যায়াম করলে ওজন দ্রুত কমানো যায়। বিশেষ করে কার্ডিওভাস্কুলার বা হাই ইন্টেন্সিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং বিকালে করলে শরীর অতিরিক্ত ফ্যাট পোড়ায়।

রাতে ঘুমানোর আগে হালকা ব্যায়ামঃ ঘুমানোর আগে হালকা ব্যায়াম যেমন যোগব্যায়াম বা স্ট্রেচিং ওজন কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এটি শরীরের পেশী রিলাক্স করে এবং মেটাবলিজমকে সক্রিয় রাখে। তবে ঘুমানোর খুব কাছাকাছি সময়ে ভারী ব্যায়াম এড়িয়ে চলা উচিত কারণ এটি ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

হাইড্রেশন বজায় রেখে দুপুরের ব্যায়ামঃ দুপুরের খাবারের পর ব্যায়াম করলে শরীরের গ্লুকোজ ব্যবহার এর হার বৃদ্ধি পায়। এই সময়ে শরীর ইতিমধ্যেই শক্তিশালী অবস্থায় থাকে এবং ভারী ব্যায়াম করার জন্য প্রস্তুত থাকে। ফলে দুপুরের ব্যায়াম দ্রুত ওজন কমানোর ক্ষেত্রে কার্যকর।

ব্যায়ামের সময় নিয়মিততা বজায় রাখাঃ ওজন কমানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ব্যায়ামের সময় ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। প্রতিদিন একই সময়ে ব্যায়াম করলে শরীর দ্রুত সাড়া দেয় এবং ফ্যাটে বার্নের হার বাড়ে। এই সময় অনুযায়ী শরীর অভ্যস্ত হয়ে গেলে ওজন কমানোর গতি দ্রুত বেড়ে যায়।

কার্ডিও এক্সারসাইজের জন্য দিনের সেরা সময়

কার্ডিও এক্সারসাইজ শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখা এবং ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য অত্যন্ত কার্যকর। তবে দিনের নির্দিষ্ট সময়ে কার্ডিও এক্সারসাইজ করা এর উপকারিতা বহুগুণ বাড়িয়ে তুলতে পারে। নিচে কার্ডিও এক্সারসাইজের জন্য দিনের সেরা সময় এবং এর সুবিধা গুলো আলোচনা করা হলো।

সকালে খালি পেটে কার্ডিওঃ সকালের সময় খালি পেটে কার্ডিও করার অভ্যাস দ্রুত ফ্যাট বার্ন করতে সাহায্য করে। সারারাত উপবাসের কারণে শরীরের গ্লাইকোজেন মজুদ কমে যায় এবং শরীর শক্তির জন্য জমা ফ্যাট ভাঙতে শুরু করে। ফলে যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য এটি একটি কার্যকর সময়। পাশাপাশি সকলের আলো মানসিক সজাগতা বাড়ায় এবং দিন শুরুর জন্য ইতিবাচক উদ্দীপনা দেয়।

বিকালে উচ্চ তীব্রতায় কার্ডিওঃ বিকেলের সময় শরীরে তাপমাত্রা এবং শক্তির মাত্রা সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকে। ফলে এই সময় উচ্চ তীব্রতায় কার্ডিও এক্সারসাইজ করলে কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। বিকালের কার্ডিও শরীরের কর্ম ক্ষমতা বাড়ায় এবং ক্যালরি বার্নের হার ত্বরান্বিত করে। যারা অফিস শেষে ফিটনেসের জন্য সময় বের করতে চাই তাদের জন্য বিকালের সময় সবচেয়ে উপযুক্ত।

দুপুরের ব্যায়ামঃ দুপুরের সময় কার্ডিও করার অভ্যাস কর্ম ক্ষমতা বজায় রাখতে সহায়ক। দুপুরের খাবারের পরে শক্তিতে পূর্ণ থাকে শরীর যা কার্ডিও এক্সারসাইজের সময় কাজে লাগে। এই সময় শরীর সহজে গ্লুকোজ কে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারে ফলে কার্যকারিতা বাড়ে এবং দুপুরের ব্যায়াম দিনে চাপ কমাতে এবং পরবর্তী কাজের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করে।

রাতে হালকা কার্ডিও এক্সারসাইজঃ যারা দিনের বাকি সময় ব্যস্ত থাকে তারা রাতে হালকা কার্ডিও এক্সারসাইজ করতে পারে। জগিং, ওয়ার্কিং বা লো ইন্টেনসিটি কার্ডিও রাতে করলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং ঘুমের মান ভালো হয়। তবে ভারী কার্ডিও এড়িয়ে চলা উচিত কারণ এটি ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

শরীরের প্রাকৃতিক ঘড়ির সঙ্গে সামঞ্জস্যঃ কার্ডিও এক্সারসাইজের সময় নির্ভর করে আপনার বায়োলজিক্যাল ক্লক এর উপর। কেউ সকালের মানুষ আবার কেউ রাতে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। আপনি যে সময় নিজেকে সবচেয়ে সক্রিয় এবং সস্তিদায়ক মনে করেন সেই সময় কার্ডিও করার জন্য অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এটি আপনার পারফরম্যান্স এবং ফিটনেস এর জন্য সবচেয়ে কার্যকর হবে।

নিয়মিত সময়ে কার্ডিও করার গুরুত্বঃ কার্ডিও এক্সারসাইজ থেকে সর্বোচ্চ উপকার পেতে প্রতিদিন একই সময়ে এক্সারসাইজ করা উচিত। এটি শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়িকে সঠিকভাবে কাজে লাগায় এবং ক্যালরি বার্নের হার বাড়ায়। নির্দিষ্ট সময়ে ব্যায়ামের অভ্যাস শরীরকে দ্রুত সাড়া দিতে সাহায্য করে এবং দীর্ঘ মেয়েদের ফিটনেস ধরে রাখতে সহায়তা করে।

মাসল বিল্ডিং এর জন্য কোন সময় উপযোগী

মাসল বিল্ডিং বা পেশি বৃদ্ধি একটি ধারাবাহিক এবং বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়া। এটি নির্ভর করে দিনের নির্দিষ্ট সময়ে ব্যায়াম করার উপরে। নিচে মাসল বিল্ডিং এর জন্য উপযুক্ত সময় এবং তার কারণ তুলে ধরা হলো।
এক্সারসাইজ করার-সঠিক সময়-কোনটি
  • সকালে ব্যায়াম করলে শরীরের হরমোনের মাত্রা বিশেষ করে টেস্টোস্টরন, স্বাভাবিকভাবেই উচ্চ থাকে। এটি পেশী গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সকালের ব্যায়াম শরীরের শক্তি ও মনোযোগ বাড়ায় যা কার্যকর ওয়ার্ক আউটের জন্য সহায়ক।
  • বিকেলে শরীরের তাপমাত্রা এবং শক্তির স্তর সবচেয়ে বেশি থাকে। ফলে এই সময় ভারী ওজন তোলার মতো ব্যায়াম করলে মাসল বিল্ডিংয়ের জন্য উপযুক্ত ফলাফল পাওয়া যায়। এছাড়া বিকালের ব্যায়াম এ ইনজুরির ঝুঁকি কমে।
  • সন্ধ্যার সময় ব্যায়াম করলে সারাদিনের স্ট্রেস দূর হয় এবং এই সময়ে শরীর আগের ব্যায়ামের প্রভাব কাটিয়ে ওঠে এবং বেশি গুলোর পুনরুদ্ধার শুরু হয়। তাই মাসল বিল্ডিং এর জন্য সন্ধ্যা কার্যকর।
  • মাসল বিল্ডিং এর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ব্যায়ামের সময় নিয়মিততা। আপনি সকালে বিকালে এবার রাতে যে কোন সময় ব্যায়াম করুন যদি এটি প্রতিদিন এক সময় হয় তবে আপনার শরীর তা মেনে নিতে পারবে এবং পেশি বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে।
  • ব্যায়ামের সময় খাবারের পরিকল্পনার উপর ও নির্ভরশীল। খাওয়ার পর কিছু সময় বিরতি দিয়ে ব্যায়াম করলে পেশি বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ নিশ্চিত হয়। বিশেষ করে সন্ধ্যার ব্যায়ামের পর সঠিক খাবার গ্রহণ মাসল রিকভারি ত্বরান্বিত করে।
  • মাসল বিল্ডিং এর জন্য ঘুম আর বিশ্রামের গুরুত্ব অপরিসীম। রাতে ভারী ওয়ার্ক আউট করলে ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে। তাই যে সময় ব্যায়াম করুন না কেন পর্যাপ্ত ঘুমের জন্য সময় রাখতে হবে।

ব্যস্ত সময়সূচিতে এক্সারসাইজের সেরা সময় বের করা

ব্যস্ত সময় সুচির কারণে অনেকেই নিয়মিত ব্যায়াম করতে পারেন না। দিনভর কাজের চাপ এবং সময়ের সীমাবদ্ধতা প্রায় এক্সারসাইজের জন্য সময় বরাদ্দে বাধার সৃষ্টি করে। তবে স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের জন্য ব্যায়াম অপরিহার্য। তাই ব্যক্তিগত ও পেশাগত সময়ের মধ্যে ভারসাম্য রেখে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এক্সারসাইজের জন্য সময় বের করা সম্ভব।

সকাল হলো ব্যায়ামের জন্য একটি আদর্শ সময়। বিশেষ করে ব্যস্ত দিন শুরু হওয়ার আগে এবং সকালের ব্যায়াম শরীরকে সক্রিয় করে শক্তি বাড়ায় এবং মনোযোগ বৃদ্ধি করে। এটি দিনের শুরুতে ইতিবাচক অভ্যাস তৈরি করে যা দীর্ঘ মেয়াদে মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এবং ব্যস্ত সময়সূচিতে সকলকে কাজে লাগিয়ে কম সময়ের মধ্যে হাই ইনটেনসিটি ইন্টারভেল ট্রেনিং যোগ ব্যায়ামের মতো কার্যকর ওয়ার্ক আউট করা সম্ভব।

ব্যায়ামের সময় ঠিক করার ক্ষেত্রে আপনার ব্যক্তিগত রুটিন ও কাজের সময় বিবেচনা করা জরুরী। দুপুর বা সন্ধ্যার বিরতিতে হালকা এক্সারসাইজ যেমন হাটা বা সহজ কার্ডিও করা যেতে পারে। এছাড়া কাজ শেষ করার পর রাতে একটি ছোট সেশন পরিকল্পনা করা সম্ভব। দিনের নির্দিষ্ট সময় গুলোতে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের এক্সারসাইজ অন্তর্ভুক্ত করলে এটি ধীরে ধীরে অভ্যাসে পরিণত হবে।

লেখক এর মন্তব্য

এক্সারসাইজ করার সঠিক সময় কোনটি, এ বিষয়ে আলোচনা শুরু করে ব্যায়াম সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি ব্যায়াম করে থাকেন এবং এই সম্পর্কে বিস্তারিত না জেনে থাকেন তাহলে আজকের এই আর্টিকেল আপনার জন্যই। এখানে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শুধু ব্যায়াম সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনারা এখান থেকে জানতে পারবেন বিস্তারিত।

এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যমূলক আর্টিকেল যদি আরও পড়তে চান তাহলে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন। কারণ আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত এই ধরনের তথ্যমূলক আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পদ্মাম্যাক্স আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url