ক্যান্সার কি
ক্যান্সার কি এই সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাহলে আপনি সঠিক জায়গাতে এসেছেন আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ক্যান্সার সম্পর্কে আলোচনা করব এবং ক্যান্সার থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে জানব।
এছাড়াও আজকের আর্টিকেলে আমরা কোন একক রোগ কি ক্যান্সার এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেই ক্যান্সার হওয়ার বিভিন্ন লক্ষণ সম্পর্কে এর থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কি।
পোস্ট সূচিপত্রঃ ক্যান্সার থেকে বাঁচার উপায় সমগ্র জেনে নিন
ক্যান্সার কি
ক্যান্সার কি, ক্যান্সার এমন এক ধরনের রোগ যেখানে শরীরের কোষগুলো অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায় এবং নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে বিভাজিত হতে থাকে। ফলে শরীরে টিউমার হতে পারে যা বিভিন্ন অঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এই রোগটি সারা বিশ্বে মৃত্যুর অন্যতম কারণ। নিচে ক্যান্সার সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক দেওয়া হল।
ক্যান্সারের সংজ্ঞা ও কিভাবে তৈরি হয়ঃ ক্যান্সার একটি জটিল রোগ যা শরীরের কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিভাজনের ফলে তৈরি হয়। কোষগুলো যখন অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায় এবং নিজের নিয়ন্ত্রণ হারায় তখন সেগুলি টিউমার গঠন করে। টিউমার গুলো যদি ম্যালিগনেন্ট হয় তবে তার শরীরের অন্য অংশে বা অন্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়তে পারে যা ক্যান্সারকে আরো বিপদজনক করে তোলে।
ক্যান্সারের ধরনঃ ক্যান্সারের অনেক ধরণ রয়েছে। শরীরের নির্দিষ্ট স্থানে টিউমার তৈরি হলে তাকে বলা হয় সলিড টিউমার যা যেমন ব্রেস্ট ক্যান্সার ফুসফুসের ক্যান্সার ইত্যাদি। আবার কিছু ক্যান্সার রক্ত বা লিস্ফ সিস্টেমে ছড়ায় যেমন লিউকেমিয়া বা ব্লাড ক্যান্সার। এ ছাড়া ম্যালিগান্ট টিউমার অত্যন্ত ক্ষতিকারক ও ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা রাখে কিন্তু বিনাইন টিউমার সাধারণত ক্ষতিকর নয় এবং ছড়ায় না।
ক্যান্সারের কারণঃ ক্যান্সারের নির্দিষ্ট কোন কারণ নেই বরং বিভিন্ন কারণ এ এটা হতে পারে। জিনগত পরিবর্তন বা মিউটেশন তামাক ব্যবহার অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস রেডিয়েশনের সংস্পর্শে আসা এবং নির্দিষ্ট ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে রোগের কারণ হতে পারে। এছাড়া পারিবারিক ইতিহাস ও ক্যান্সার হাওয়ায় ভূমিকা রাখে।
লক্ষণ ও উপসর্গঃ ক্যান্সারের লক্ষণ ও উপসর্গ গুলো অনেক ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় প্রকাশ পায় না। কিছু সাধারণ লক্ষ্য হলো অস্বাভাবিক ফোলা বা গাট দেখা দেওয়া অকারণ ওজন কমে যাওয়া দীর্ঘস্থায়ী কাশি হাড়ে ব্যথা ত্বকে পরিবর্তন ইত্যাদি। প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার ধরা পড়লে চিকিৎসা সহজ করা হয় কিন্তু অনেক সময় লক্ষণগুলো দেরিতে প্রকাশ পায়।
ক্যান্সার কি কোন একক রোগ
ক্যান্সার কি, ক্যান্সার এমন একটি রোগ যার মধ্যে শরীরের কোষগুলো নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে বৃদ্ধি পায় বিভাজিত হয়। এটি কোন একক রোগ নয় বরং বিভিন্ন ধরনের এবং বিভিন্ন জায়গায় হতে পারে। এখানে ক্যান্সার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
আরো পড়ুনঃ রাজশাহী সেরা ভিডিও এডিটিং কোর্স
কোষের ডিএন এ মিউটেশনঃ ক্যান্সার মূলত কোষের ডিএনএ বা জেনেটিক মেটিরিয়ালে ঘটে যাওয়া মিউটেশনের কারণে হয়। এই মিউটেশনে কোষের বৃদ্ধি বিভাজন এবং মৃত্যুর নিয়মকে বদলে দেয় ফলে কোষগুলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ডিএনএ মিউটেশন হতে পারে জন্মগত কারণে অথবা তামাক রেডিয়েশন রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শ এবং কিছু ভাইরাসের কারণে।
আক্রমণাত্মক এবং নিরাময়যোগ্য ক্যান্সারের পার্থক্যঃ ক্যান্সারের ধরনের অনুযায়ী এর প্রভাব ভিন্ন হতে পারে। কিছু ক্যান্সার যেমন ম্যালিগনেন্ট টিউমার শরীরের বিভিন্ন অংশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং জীবনানশক হতে পারে। আবার কিছু ক্যান্সার যেমন বিনাইন টিউমার সীমিত এলাকায় থাকে এবং খুব কমই অন্য অঙ্গে ছড়ায়। বিনাইন টিউমার অনেক সময় অস্ত্রপচারের মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে নিরাময়যোগ্য হয়।
অ্যানজিওজেনেসিস প্রক্রিয়াঃ ক্যান্সার টিউমারের বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে অ্যানজিওজেনেসিস নামক প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ায় টিউমার নিজস্ব রক্তনালি তৈরি করতে শুরু করে যাতে রক্ত এবং পুষ্টি সরবরাহ পায় এবং বৃদ্ধি পেতে পারে। অ্যানজিওজেনেসিস ক্যান্সারের দ্রুত বিস্তারের জন্য দায়ী এবং একে থামানোর জন্য কিছু বিশেষ ধরনের ওষুধ যেমন অ্যানজিওজেনেসিস ইনহিবিটার ব্যবহার করা হয়।
মেটাস্টসিসঃ ক্যান্সারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো মেটাস্টসিস যেখানে ক্যান্সার কোষ প্রাথমিক টিউমার থেকে ভেঙে শরীরের অন্য অঙ্গে প্রবেশ করে। মেটাস্টসিস এর ফলে ক্যান্সার শরীরের বিভিন্ন অংশ ছড়িয়ে পড়ে যা চিকিৎসার জন্য আরো জটিল হয়ে ওঠে। ফুসফুস যকৃত এবং হাড় মেটাস্টসিস এর সাধারণ স্থান।
ক্যান্সার স্টেজ বা ধাপঃ ক্যান্সার নির্ণয়ের সময় এটি বিভিন্ন স্টেজ বা ধাপে বিভক্ত থাকে। প্রথম ধাপ হলো প্রাথমিক স্টেজ যেখানে ক্যান্সার কোষ কেবল নির্দিষ্ট স্থানে সীমাবদ্ধ থাকে। দ্বিতীয় ধাপে টিউমারটি বড় হতে থাকে। তৃতীয় ধাপে এটি আশেপাশে টিস্যুতে ছড়িয়ে পড়ে এবং চতুর্থবার শেষ ধাপে ক্যান্সার শরীরের দূরের অংশে ছড়িয়ে যায়। এই স্টেজ গুলোর উপর ভিত্তি করে চিকিৎসার পরিকল্পনা করা হয় এবং জীবনধারণের সম্ভাবনা নির্ধারণ করা হয়।
ক্যান্সারের ধরন
ক্যান্সার কি, ক্যান্সার বিভিন্ন ধরনের হতে পারে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত হানে। প্রতিটি ক্যান্সারের গঠন বিস্তার ও চিকিৎসা পদ্ধতি আলাদা। এখানে ক্যান্সারের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধরণ নিয়ে আলোচনা করা হলো।
কার্সিনোমাঃ কার্সিনোমা হলো সবচেয়ে সাধারণ ক্যান্সারের ধরন যার শরীরের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক আবরণ তৈরি করা কোষ থেকে শুরু হয়। যেমন ফুসফুস প্রোস্টেট এবং কোলন ক্যান্সার গুলো সাধারণত কার্সিনোমা হিসেবে পরিচিত। কার্সিনোমা আবার অ্যাডিনোকার্সিনোমা সেল কার্সিনোমা ইত্যাদি ভাগ করা হয়। এটি সাধারণত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা রাখে এবং রোগ নির্ণয় চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।
সারকোমাঃ সারকোমা হলো এমন একটি ক্যান্সার ধরন যা শরীরের সংযোগকারী টিস্যুতে আঘাত হানে যেমন হার পেশি চর্বি এবং রক্তনালী। হারের ক্যান্সার যেমন অস্টিওসারকোমা এবং সফট টিস্যুতে যেমন লিপোসারকোমা এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। এ ক্যান্সার গুলো তুলনামূলকভাবে বিরল এবং সাধারণত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। প্রাথমিকভাবে নির্ণয় করা গেলে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
লিউকেমিয়াঃ লিউকেমিয়া বা ব্লাড ক্যান্সার হলে এমন একটি ক্যান্সারের ধরন যা রক্ত এবং অস্থিমজ্জার কোষে আঘাত আনে। এটি লিউকোসাইট বা সাদা রক্ত কণিকাকে প্রভাবিত করে যার ফলে অস্বাভাবিক কোষ তৈরি হয় এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আঘাত করে। লুকেমিয়া আবার অ্যাকিউট লিউকেমিয়া বেশি মারাত্মক ও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে যার রোগীদের জন্য বিপদজনক হতে পারে।
লিম্ফোমাঃ লিম্ফোমা হল লিম্ফেটিক সিস্টেমের ক্যান্সার যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। এটি প্রধানত দুটি ভাগে বিভক্ত হজকিন লিম্ফোমা এবং নন হজকিন লিম্ফোমা। হজকিন লিম্ফোমা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়াশীল এবং চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ননহজকিন লিম্ফোমা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে এবং অনেক সময়টি অন্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা রাখে।
মেলানোমাঃ মেলানোমা হল ত্বকের ক্যান্সার যা মেলানোসাইট নামক কোষ থেকে সৃষ্টি হয়। কোষগুলো মেলানিন উৎপাদন করে যা ত্বকের রং নির্ধারণ করে। মেলানোমা ত্বকে অস্বাভাবিক ফোলা বা ক্ষত রূপে প্রকাশ পায় যা কাল বা বাদামি রঙের হয়। এটি অত্যন্ত বিপদজনক কারণ মেলানোমা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা রাখে এবং অনেক সময় তার শরীরের অন্যান্য অংশে ও আঘাত করতে পারে। এটি প্রাথমিকভাবে নির্ণয় করা গেলে চিকিৎসা সহজ হয়।
ক্যান্সার রোগের বিভিন্ন লক্ষণ
ক্যান্সার কি, ক্যান্সার রোগের বিভিন্ন লক্ষণ বা উপসর্গ রোগের ধরন অবস্থান এবং প্রাথমিক বা উন্নত স্টেজের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন রকম হতে পারে। বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার বিভিন্ন শরীরের অংশের প্রভাব ফেলতে পারে। এগুলো লক্ষণগুলো ও আলাদা হয়। নিজে ক্যান্সারের বিভিন্ন সাধারণ লক্ষণ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা হলো।
আরো পড়ুনঃ দক্ষতা অর্জনের গুরুত্ব
অস্বাভাবিক ফোলাঃ ক্যান্সারের অন্যতম সাধারণ লক্ষণ হলো শরীরে অস্বাভাবিক ফোলা দেখা দেওয়া। এই পোলা গুলো সাধারণত শরীরের বাইরে থেকে দেখা যায় ঘাড় বা ত্বকের নিচে। গাটগুলো ব্যাথাহীন হলেও ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে এবং প্রায় শক্ত হয়। স্তন ক্যান্সার বা লিম্ফোমার মত রোগে এ ধরনের ফোলার সৃষ্টি হয়।
হঠাৎ ওজন কমে যাওয়াঃ ওজন কমা বা হঠাৎ ক্ষুধা মন্দ হওয়া অনেক ধরনের ক্যান্সারের সাধারণ লক্ষণ। ক্যান্সার রোগীরা তাদের স্বাভাবিক খাবার খেয়ে ও দ্রুত ওজন কমতে দেখে যা এক ধরনের বিপদের সংকেত হতে পারে। এটি প্রধানত পাকস্থলী অগ্নাশয় এবং ফুসফুস ক্যান্সারের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। ওজন কমা মানে সব সময় ক্যান্সার নয় তবে দ্রুত ওজন কমতে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
ত্বকের অস্বাভাবিক পরিবর্তনঃ ত্বকের অস্বাভাবিক পরিবর্তন যেমন দিল বা আঁচিলের আকৃতি রং বা আকারের পরিবর্তন মেলানোমা-বা ত্বকের ক্যান্সারের ইঙ্গিত হতে পারে। তেল বা আঁচিল হঠাৎ বড় হয়ে গেলে ফেটে গেলে এবার রক্তপাত হলে ক্যান্সারের লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। এছাড়াও বাদামী বা লালচে রংয়ের দাগ ত্বকে দেখা দিলে তা ত্বকের ক্যান্সারের আগাম সংকেত হতে পারে।
দীর্ঘস্থায়ী কাশি ও গলার ব্যথাঃ ফুসফুস ক্যান্সার বা গলা ক্যান্সারের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে কাশি বা গলা ব্যথা হতে পারে। বিশেষ করে কাশি থেকে রক্ত আসা গলায় চাপ অনুভব হওয়া কথা বলতে অসুবিধা হলে তা ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। যেসব ব্যাক্তি দীর্ঘদিন ধরে ধূমপান করার অভ্যাস রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে লক্ষণগুলো ক্যান্সারের ঝুঁকির ইঙ্গিত দেয়।
ক্লান্তি ও দুর্বলতাঃ ক্যান্সারের আরেকটি অসাধারণ লক্ষণ হলো অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা। ক্যান্সার কোষগুলো শরীরের পুষ্টি শোষণ করে ফলে রোগী খুব সহজেই ক্লান্ত বোধ করেন এবং স্বাভাবিক কাজ করতেও কষ্ট হয়। এমন কি বিশ্রাম নেওয়ার পরেও এ ক্লান্তি দূর না হলে এটি ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। এই লক্ষণটি সাধারণত লিউকেমিয়া লিম্ফোমা এবং কলারেক্টাল ক্যান্সারের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়।
ক্যান্সারের রোগ নির্ণয় পদ্ধতি
ক্যান্সার নির্ণয়ের পদ্ধতি বিভিন্ন ধরনের এবং ক্যান্সারের প্রকারভেদ ও অবস্থার অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানে ক্যান্সার নির্ণয় বেশ কিছু কার্যকর পদ্ধতি রয়েছে। এখানে ক্যান্সার রোগ নির্ণয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতির সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
বায়োপসিঃ বায়োপসি হল ক্যান্সার নির্ণয়ের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি। এটা আক্রান্ত অংশের সামান্য টিস্যু বা কোষের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তা মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়। এর মাধ্যমে ক্যান্সারের উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায় এবং তা ক্যান্সারের প্রকারভেদ সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেয়। বিভিন্ন ধরনের বায়োপসি রয়েছে যেমন সূচ বায়োপসি ইন সিসনাল বায়োপসি এবং অ্যাক্সিসনাল বায়োপসি যা রোগের অবস্থান ও প্রকার অনুযায়ী ব্যবহৃত হয়।
ইমেজিং পরীক্ষাঃ ক্যান্সার নির্ণয়ে ইমেজিং টেস্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এক্সপ্রেস সিটি স্ক্যান এমআরআই এবং পিইটি স্ক্যানের মাধ্যমে শরীরের অভ্যন্তরীণ অংশের ছবি নেওয়া হয়। যা ক্যান্সারের অবস্থা এবং বিস্তারের মাত্রা নির্ধারণ এ সহায়ক। সিটি স্ক্যান এবং এমআরআই স্ক্যান বিশেষভাবে শরীরের নির্দিষ্ট অংশে টিউমার বা ফোলা দেখতে সহায়ক। পিইটি স্ক্যান কোষের বিপাক ক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করে এবং ক্যান্সারের বিস্তারের তথ্য দেয়।
রক্ত পরীক্ষাঃ রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে কিছু বিশেষ ধরনের ক্যান্সারের উপস্থিতি নির্ণয় করা যায়। কিছু নির্দিষ্ট ক্যান্সারের জন্য রক্তের ক্যান্সার সংশ্লিষ্ট পদার্থ বা টিউমার মার্কারের উপস্থিতি থাকে। উদাহরণস্বরূপ প্রটেস্ট ক্যান্সারের নির্ণয় পিএসএ পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া লিভার ক্যান্সারের জন্য আলফা ফটোপ্রোটিন এবং ওভারিয়ান ক্যান্সারের জন্য সিএ ১২৫ পরীক্ষা করা হয়।
এন্ডোস্কপিঃ এন্ডোস্কপি এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে একটি দীর্ঘ সরূ টিউব যার একপ্রান্তে ক্যামেরা সংযুক্ত থাকে তা শরীরের অভ্যান্তরীণ অংশ পর্যবেক্ষণের জন্য প্রবেশ করানো হয়। এটি বিশেষ করে পাকস্থলী, কোলন এবং শ্বাসনালীর ক্যান্সার নির্ণয় কার্যকর। গ্যাস্ট্রোস্কপি কলোনোস্কপি এবং ব্রংকোস্কপি বিভিন্ন ধরনের এন্ডোস্কপি পদ্ধতি য ক্যান্সারের সম্ভাব্য লক্ষন বা উপস্থিতি শনাক্ত করতে ব্যাবহার করা হয় ।
জেনেটিক পরীক্ষাঃ জেনেটিক পরিক্ষার মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছু ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায়। যেসব রোগীর পরিবারে ক্যান্সারের ইতিহাস আছে তাদের জেনেটিক পরীক্ষার মাধ্যমে এই ঝুঁকি নির্ণয় করা হয়। কিছু নির্দিষ্ট জিনের পরিবর্তন যেমন বি আর সি এ ১ এবং বি আর সি এ ২ জিন স্তন এবং ডিম্বাশয় ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এই ধরনের পরীক্ষা রোগী ও চিকিৎসকদের ক্যান্সার প্রতিরোধ ও নির্ণয়ে গুরুত্বপুর্ণ সিধান্ত নিতে সাহায্য করে।
ক্যান্সারের কারণ
ক্যান্সার একটি জটিল রোগ যার নির্দিষ্ট কারন একক নয় এটি বিভিন্ন বিষয় এবং ঝুঁকির সম্মিলিত প্রভাব থেকে সৃষ্টি হতে পারে। ক্যান্সার কোষের ডিএনএ বা জেনেটিক উপাদানে পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট হয় যার ফলে কোষগুলো নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। নিচে ক্যান্সারের কারণ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
তামাক এবং ধূমপানঃ তামাকের ব্যবহার শরীরে কিছু ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ প্রবেশ করে যা ফুসফুস, মুখগহবর, গলা এবং অন্যান্য অঙ্গে ক্যান্সার তৈরি করতে পারে। ধূমপানের কারণে শরীরে কারসিনোজেনিক পদার্থ জমা হয় যা কোষের ডিএনএ তে পরিবর্তন ঘটায় এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাসঃ অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার প্রক্রিয়াজাত মাংস এবং উচ্চ পরিমাণে লাল মাংস খাওয়া সবগুলোই ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। উদাহরণস্বরূপ উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার এবং প্রক্রিয়াজাত মাংস খাওয়ার সাথে কোলন এবং পাকস্থলী ক্যান্সারের সম্পর্ক পাওয়া গেছে। অতিরিক্ত ওজন ও শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে যা বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনঃ অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন মুখোগহবর খাদ্যনালী এবং যকৃতের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। অ্যালকোহল শরীরের কোষগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং কোষের ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হয় যার ফলে ক্যান্সারে ঝুঁকি বাড়ে।
বংশগত কারণঃ কিছু ক্যান্সারের ক্ষেত্রে বংশগত জিনের পরিবর্তন ভূমিকা রয়েছে। যেমন বিআরসিএ ১ ও বিআরসিএ ২ জিনের পরিবর্তন ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। বংশগত কারণ ছাড়াও পারিবারিক ইতিহাসে ক্যান্সারের উপস্থিতি থাকলে ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে।
ভাইরাস এবং সংক্রমণঃ কিছু ভাইরাস সংক্রমণ ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ হিউম্যান পাপিলোমা ভাইরাস জরায়ু ক্যান্সারের একটি প্রদান করুন। হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস লিভার ক্যান্সারের ঝুকি পাড়ায়। ভাইরাস গুলো শরীরের কোষে সংক্রমণ ঘটিয়ে ডিএনএ পরিবর্তন ঘটায় এবং ক্যান্সারের প্রবণতা বাড়ায়।
মনোসামাজিক ক্ষেত্রে ক্যান্সারের প্রভাব
ক্যান্সার রোগীর জীবনে মনোসামাজিক প্রভাব গভীর এবং বহুমাত্রিক। এটি কেবল শারীরিক দুর্বলতা নয় বরং মানসিক ও সামাজিক জীবনের উপরও গভীর ছাপ ফেলে। ক্যান্সার রোগীরা প্রায়ই বিষণ্যতা উদ্যোগ এবং আশাহীনতার শিকার হন। ক্যান্সারের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের খবর অনেকের জীবনে এক ধরনের হতাশ এবং অনিশ্চয়তা এনে দেয় যা মানসিক স্বাস্থ্যের বিরূপ প্রভাব ফেলে। এমনকি কেমোথেরাপি ও রেডিও থেরাপির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রোগের মানসিক অস্বস্তি বাড়ি তোলে। অনেকে নিজের শরীরে পরিবর্তন ও দুর্বলতা মেনে নিতে পারেন না।
সামাজিক ক্ষেত্রেও ক্যান্সার রোগীদের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। পরিবার ও বন্ধুদের সহানুভূতি থাকা সত্ত্বেও তারা সামাজিক মেলামেশায় আগ্রহ হারান এবং অনেক সময় নিজেকে আলাদা করে ফেলেন। রোগী নিজেকে বোঝা মনে করেন এবং সামাজিক সমর্থন পেতে সংকোচ বোধ করেন। ক্যান্সার যেমন একটি দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা প্রক্রিয়া তেমনো আইডি সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্নতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এর ফলে অনেকেই কর্মজীবন থেকে নির্বিচ্ছন্ন হয়ে যান যা আরো মানসিক চাপের কারণ হয় এবং সমাজে আত্মপরিচয় সংকট তৈরি হয়।
মোটের উপর ক্যান্সার রোগীর ও তার পরিবারকে এমন অসামাজিক মোকাবেলায় বিশেষ যত্ন ও সমর্থনের প্রয়োজন হয়। রোগীদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা দূর করতে চিকিৎসকের পাশাপাশি পরিবার এবং বন্ধুদের সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সচেতনতা ও মানসিক সমর্থনের মাধ্যমে ক্যান্সার রোগীরা আবারও সমাজে আত্মবিশ্বাস নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে আসতে পারেন।
টিউমার থেকে ক্যান্সারের লক্ষণ
টিউমার থেকে ক্যান্সার হওয়া একটি জটিল প্রক্রিয়া এবং এর লক্ষণ গুলো প্রাথমিক অবস্থায় ধরা না পড়তে পারে। টিউমার প্রধানত দুই ধরনের হয়ে থাকে বিনাইন এবং ম্যালিগনেন্ট। ম্যালিগনেন্ট থেকে ক্যান্সার তৈরি হয় যা শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং এটি নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কঠিন। ট্রিমার যখন ক্যান্সারের রূপান্তরিত হয় তখন কিছু বিশেষ লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
আরো পড়ুনঃ কাঁচা আমলকি খাওয়ার ২০টি নিয়ম ও উপকারিতা
ক্যান্সার থেকে অদ্ভুত টিউমার সাধারণত দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং আক্রান্ত স্থানে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। একটি টিউমার শরীরে দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকলে এবং ধীরে ধীরে তারা আকার ও শক্তি বৃদ্ধি পেলে তা ক্যান্সারের সম্ভাবনা নির্দেশ করতে পারে। আক্রান্ত স্থানে যদি ফলা অনুভব হয় বিশেষত যদি তাতে ব্যথা না থাকে এবং তা ক্রমশ বড় হতে থাকে তবে এটি ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। ক্যান্সার থেকে টিউমারের কারণে প্রায়ই আক্রান্ত স্থানে ব্যথা চাপ বা অসস্তি অনুভূত হয়।
শরীরে ওজন হঠাৎ করে কমে যাওয়া এবং অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করাও ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। এমন কি পর্যাপ্ত অনুভব করাও ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। এমনকি পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার পরেও যদি রোগী ক্লান্ত বোধ করেন তবে এটি ক্যান্সারের দিক নির্দেশ করতে পারে। কিছু টিউমার থেকে ক্যান্সার হলে স্থানীয় লিম্ফো নোটগুলো ফুলে যেতে পারে যা স্পর্শ করলে টের পাওয়া যায়।
পেটের ক্যান্সারের লক্ষণ
পেটের ক্যান্সার বা গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার শরীরে গুরুত্বপূর্ণ অংশে আক্রমণ করে এবং এর লক্ষণগুলো প্রথমে হালকা হলেও ধীরে ধীরে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষণ গুলো সাধারণত খুবই স্পষ্ট না থাকার অনেক সময়টি নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়ে। পেটের ক্যান্সারের একটি সাধারণ লক্ষণ হল পেটের ব্যাথা এবং অস্বস্তি যা সময়ের সাথে বৃদ্ধি পায়। খাবার খাবার পর তীব্র অস্বস্তি বমি বমি ভাব প্রায় বমি হয় রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে দেখা দিতে পারে।
এছাড়াও খাবারে এবং দ্রুত ওজন কমে যাওয়া পেটের ক্যান্সারের উল্লেখযোগ্য লক্ষণ। খাবারের অরুচি দেখা দিলে এবং হঠাৎ করে শরীরের ওজন কমে গেলে তা ক্যান্সারের ইঙ্গিত দিতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে পেটের ক্যান্সারের কারণ খাবার গলধকরণে অসুবিধা হতে পারে এবং পেট ফুলে থাকতে পারে। এছাড়া খাবারের পর অনেক সময় পেট ভর্তি থাকা অস্বস্তি অনুভব হতে পারে।
আমাদের শেষ কথা
ক্যান্সার কি, এ বিষয়ে আলোচনা শুরু করে ক্যান্সার সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। যদি ক্যান্সার সম্পর্কে বিস্তারিত না জেনে থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেল আপনার জন্যই। এখানে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শুধু ক্যান্সার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনার এখান থেকে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যমূলক আর্টিকেল যদি আরো পড়তে চান তাহলে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন। কারণ আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ধরনের তথ্যমূলক আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকে।
পদ্মাম্যাক্স আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url